সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দলিল। একটি ভবন বা ইমারত যেমন এর নকশা দেখে তৈরি করা হয়, তেমনি সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। সরকার কী ধরনের হবে, নাগরিক হিসাবে আমরা কী অধিকার ভোগ করব, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ কী ক্ষমতা ভোগ করবে তার সবকিছুই এতে লিপিবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশের সংবিধান রচনার ইতিহাস :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ। দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের বিজয় অর্জিত হয়। ১৯৭২ সালের ১০ই এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে এবং ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে একটি সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ছয় মাসের মধ্যে খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করে। ১৯৭২ সালের ৩০শে অক্টোবর গণপরিষদে এটি আলোচিত হয়। অবশেষে একই বছরের ৪ঠা নভেম্বর গণপরিষদে এটি চূড়ান্ত অনুমোদন পায় ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতে, “এই সংবিধান লিখিত হয়েছে লাখো শহিদের রক্তের অক্ষরে” । তাই এটি আমাদের সবার কাছে একটি পবিত্র দলিল হিসাবে গণ্য।
সংবিধান কোনো অপরিবর্তনশীল বিষয় নয়। সময়ের প্রয়োজনে এটি পরিবর্তিত এবং সংশোধিত হতে পারে। এ যাবৎ ১৭ বার সংশোধিত হয়েছে। সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধনী (সপ্তদশ) সংসদে পাস হয় ৮ই জুলাই ২০১৮।
আমাদের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ :
১. গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার : বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত হবে।
২. সংসদীয় পদ্ধতির সরকার : বাংলাদেশে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা চালু থাকবে। এই পদ্ধতিতে প্রকৃত শাসন ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকবে।
৩. লিখিত সংবিধান : এটি একটি লিখিত দলিল। যা ১১ ভাগে বিভক্ত এবং এতে ১৫৩টি অনুচ্ছেদ ও একটি প্রস্তাবনা আছে।
৪. রাষ্ট্রীয় মূলনীতি : সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো : জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।
৫. রাষ্টধর্ম : সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্য সকল ধর্ম ও ধর্মের অনুসারীদের সমান মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
৬. জাতি ও জাতীয়তা : বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালি নামে পরিচিত হবে এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের পরিচয় হবে ‘বাংলাদেশি'।
৭. এককেন্দ্রিক সরকার : দেশে এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত থাকবে।
৮. এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা : সংবিধানে এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত ৩০০ জন সংসদ সদস্য ও তাদের দ্বারা নির্বাচিত ৫০ জন মহিলা সংসদ সদস্য নিয়ে এই আইনসভা গঠিত হবে।
৯. মৌলিক অধিকার : সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও তা সংরক্ষণের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
১০. জনগণের সার্বভৌমত্ব : সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ক্ষমতা পরিচালনা করবে।
১১. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
১২. সর্বজনীন ভোটাধিকার সংবিধানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ১৮ বছর থেকে তদুর্ধ বয়সের সকল নাগরিককে ভোটাধিকার প্রদান করা হয়েছে ।
১৩. নির্বাচন অনুষ্ঠান : মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে ।
১৪. সংবিধান সংশোধন : সংসদ সদস্যদের মোট সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে সংবিধান সংশোধন করা যাবে।
আরও দেখুন...